আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জান্নাতবাসীদের জন্য যে সব খাবার এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তার মধ্যে সবচেয়ে বরকতময় খাবার মধু। মধু আমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিশেষ নেয়ামত। এই মধুতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অনেক রোগের নিরাময় দিয়েছেন।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র এবং আমাদের ধর্ম শাস্ত্র বলুন, সর্বত্র মধুকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়। সর্বশক্তিমান আল্লাহ মৌমাছি সম্পর্কে বিশ্বের সেরা গ্রন্থ আল কুরআনে একটি সূরাও নাজিল করেছেন। যার নাম ‘নাহল’। পবিত্র কোরআনের সূরা মুহাম্মাদ-এ, মহান আল্লাহ জান্নাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, “এর তলদেশে প্রবাহিত হবে মিষ্টি স্রোত মানে মধুর প্রবাহ”।
হাজারো গুণে ভরপুর মধুতে রয়েছে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ যা শরীরে শক্তি যোগায়। এই মধুতে অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে। উদাহরণ- এনজাইম, খনিজ পদার্থ (যেমন পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ এবং অন্যান্য অনেক খনিজ) এবং প্রোটিন। মধুতে এমন কোনো কোলেস্টেরল নেই যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর।
প্রাক্রিতিকভাবে সংগ্রহ করা কালোজিরা ফুলের মধুর কিছু বৈশিষ্ট্যঃ
১. এটি দেখতে কালো রঙের কিন্তু কতটা কালচে তা নির্ভর করে ফুলের রস কতটা কালোজিরা ফুল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে তার উপর।
২. কালোজিরা ফুলের মধু খেতে অনেকটা খেজুরের গুড়ের মতো।
৩. আবার ঘ্রাণও হবে খেজুরের গুড়ের মতো।
৪. এই মধুর ঘনত্ব কম বা বেশি হতে পারে।
৫. মধু পাতলা হলে ফেনা দেখা যাবে। আর ঘনত্ব বেশি হলে ফেনা কম দেখা যাবে।
কালোজিরা ফুলের মধু কি, কখন এবং কিভাবে সংগ্রহ করা হয়?
আমাদের বাংলাদেশে সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসে কালোজিরা ফুলের মধু সংগ্রহের মৌসুম শুরু হয়। ফেব্রুয়ারি মাসে যখন কালোজিরা ফুল প্রচুর পরিমাণে ক্ষেতে ফুটতে শুরু করে, তখন মৌ চাষীরা কালোজিরার বিশাল ক্ষেতের পাশে তাদের মৌ বাক্স স্থাপন করে।
অতঃপর, ফুল ফোটার সাথে সাথে মৌমাছিরা সেই ফুল থেকে ফুলের রস সংগ্রহ করে এবং মৌমাছিদের মুখে দেয়, এই ফুলের রস এবং মৌমাছিদের শরীরে থাকা এনজাইমগুলি একত্রিত হয়ে মধু তৈরি করে, যা তারা তাদের মৌচাকে সংরক্ষণ করে। এই প্রক্রিয়ায় কালোজিরা ফুলের প্রাকৃতিক মধু সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে তৈরি করা হয়।
কালোজিরা ফুলের মধুর বৈশিষ্ট্যঃ
প্রাকৃতিকভাবে সংগ্রহ করা মধু চেনার জন্য মধু সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। মধু বা মধুর গুণাগুণ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকলে আপনি যে মধু কিনছেন তা খাঁটি না ভেজাল তা জানতে পারবেন না। কালিজিরা ফুলের মধুর বৈশিষ্ট্যগুলি জানা থাকলে আপনার মধু কেনার সময় সাহায্য হবে।
মনে রাখতে হবে প্রতিটি ফুলের মধুর আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। স্বাদ, গন্ধ, রঙ এবং ঘনত্ব ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। যেমন: লিচু ফুলের মধু, সরিষা ফুলের মধু, সুন্দরবনের মধু, ধনে ফুলের মধু, বরই ফুলের মধু, পাহাড়ী ফুলের মধু ইত্যাদি। একইভাবে কালোজিরা ফুলের মধুরও কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। চলুন জানা যাক কালোজিরা ফুলের মধুর বৈশিষ্ট্য কি কি?
কালোজিরা ফুলের মধুর স্বাদঃ
খেজুরের গুড় নিশ্চয়ই খেয়েছেন, এই গুড় খেতে কেমন লাগে?
ভাবছেন কেন জিজ্ঞেস করছি, এই প্রশ্নটা করার কারণ হল আপনি যদি কালোজিরা ফুলের মধু খান তাহলে মনে হতে পারে আপনি খেজুরের গুড় খাচ্ছেন। হ্যাঁ, কালোজিরা ফুলের মধু খেজুরের গুড়ের মতো। অর্থাৎ কালোজিরা ফুলের মধুর স্বাদ খেজুরের গুড়ের মতোই। খেজুরের গুড় আর এই মধুর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই বলে মনে হবে। কিন্তু খুব মিষ্টি। অনেকেই আমাকে বলেন ভাই মধু অনেক মিষ্টি, আপনাদের জন্য বলছি, হ্যা ভাই মধু তো মিষ্টি হবেই। মধু চিনির থেকে অনেক গুন বেশি মিষ্টি হয়।
কালোজিরা ফুলের মধুর গন্ধঃ
আচ্ছা বলুন তো এই মধুর স্বাদ যদি খেজুরের গুড়ের মত হয় তাহলে গন্ধ কেমন হতে পারে?
থাক আপনার ব্রেনে চাপ বাড়ানোর দরকার নাই আমিই বলে দিচ্ছি। এই মধুর ঘ্রাণ টাও খেজুরের গুড়ের মত বেশ আকর্ষণীয় এবং মনোমুগ্ধকর।
কালোজিরা ফুলের মধুর রঙঃ
কালোজিরা ফুলের মধু স্বাদে ও ঘ্রাণে খেজুরের ঝোলা গুড়ের মত, ঠিক তেমনি দেখতেও খেজুরের গুড়ের মত। এই মধু দেখতে কালচে রঙের হয় তবে কতটা কালচে তা নির্ভর করে কতটুকু কালোজিরা খেত থেকে সংগ্রহ করা তার উপর। ধরুন মধুর বক্স যেখানে ছিল তার পাশে যদি কালোজিরা ছারাও অন্য ফসল থাকে যেমন ধনিয়া ক্ষেত, তাহলে মৌ-মাছি কালোজিরা ছারাও যদি ধনিয়া বা অন্য কোন ফুল থেকে নেক্টার সংগ্রহ করে তাহলে কালচে কম হবে। মানে কথা যত বেশি কালোজিরা ফুল থেকে নেক্টার সংগ্রহ করবে মধু তত বেশি কালচে হবে।
অনেক সময় দেখা যায় মধু সংগ্রেহের জন্য যেখানে বক্স রাখা হয় সেখানে কালোজিরা ক্ষেতের পাশাপাশি ধনিয়া ক্ষেতও থাকে, যদি কালোজিরা আর ধনিয়া খেত সমান সমান হয় তাহলে আমরা বলি কালোজিরা ও ধনিয়া মিক্স ফুলের মধু। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৮০% কালোজিরা ক্ষেত থাকলেই সেখানেই বক্স গুলা বসানো হয়। মধুর রং দেখে সহজেই বোঝা যায় কালোজিরা কি পরিমাণে ছিল।
কালোজিরা ফুলের মধুর ঘনত্বঃ
এই মধুর ঘনত্ব কি রকম হবে তা নির্দিষ্ট ভাবে বলা কঠিন। মধুর ঘনত্ব নির্ভর করে পারিপার্শ্বিক আবহাওয়া, তাপমাত্রা, মধু পরিপক্বতা এবং মৌচাষির উপরে। তবে আমাদের বাংলাদেশে যে মধু সংগ্রহ হয় তাতে সাধারণত ১৮% থেকে ২৫% পর্যন্ত জলীয় উপাদান থাকে। তবে এই পরিমাণ অনেক সময় কিছু কম বা বেশ হতে পারে। মধুতে জলীয় উপাদান যত কম হবে মধুর ঘনত্ব তত বেশি হবে আবার জলীয় উপাদান যত বেশি হবে মধু তত পাতলা হবে।
প্রাকৃতিক মধুর উপকারিতাঃ
আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রতি মাসে তিন দিন সকালে মধু চেটে খাবে, তার বড় কোন রোগ হবে না।” (ইবনে মাজাঃ ৩৪৪১)
কালোজিরা সম্পর্কে মহানবী (সা.) আরও বলেছেন: কালোজিরা ‘সাম (মৃত্যু)’ ছাড়া সব রোগের ওষুধ। (প্রকাশক: ইসলামিক ফাউন্ডেশন / বই: সহীহ বুখারি (ইফা) / অধ্যায়: 63 / ওষুধ (كتاب الطب) / হাদিস নম্বর: 5285)
বুঝতেই পারছেন কালোজিরা ফুলের মধুতে কতটা রহমত আছে।